উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত রেখার কাছে পাকিস্তানের সামরিক মহড়া

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 01 May, 2025
ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) কাছে পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনারা। বৃহস্পতিবার (১ মে) ট্যাংক, কামান, গোলা ও তাজা গুলি নিয়ে মহড়া দেয় তারা।
সেনাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, এই মহড়া শত্রুপক্ষের যে কোনো ধরনের আগ্রাসনকে কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছে। এতে বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ সেনারা অংশ নেন। সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, গতকাল বুধবার ভারতীয় সেনারা বিনা উস্কানিতে এলওসির কিয়ানি ও মন্ডল সেক্টর দিয়ে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ে। পরবর্তীতে পাক সেনারা জবাবে ভারতীয় সেনাদের কয়েকটি চেকপোস্ট ধ্বংস করে দেয়। আর এই গোলাগুলি ও চেকপোস্ট ধ্বংস করার পরই সীমান্তে সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হয়।
বিডি নিউজ২৪ ডট কম বলছে, নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার এই সামরিক মহড়ায় গোলাবর্ষণের অনুশীলনসহ যুদ্ধপ্রস্তুতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
“শত্রুপক্ষের সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাবে সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত—এমন একটি বার্তা দিতে চেয়েছে ইসলামাবাদ,” লিখেছে পত্রিকাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা এবং সৈন্যরা এ মহড়ায় অংশ নেন। বাহিনীর হাতে থাকা উন্নত যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৌশলগত দক্ষতা প্রদর্শন করা হয় সেখানে।
এর আগের দিন বুধবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনীর ‘উসকানিমূলক’ গুলির জবাবে কিয়ানি ও ম্যান্ডাল সেক্টরে একটি ভারতীয় চৌকি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের চাকপুত্রা চৌকিও ধ্বংস করা হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ‘পাল্টা হামলায়’।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়।
এই হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে আসছে দিল্লি। তবে পাকিস্তান বলে আসছে, ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ ভারত এখনো দেখাতে পারেনি।
ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানিদের দেওয়া ভিসা বাতিল করেছে এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
জবাবে পাকিস্তান সরকার ভারতের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে। সাধারণ ভারতীয়দের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সীমান্তের প্রধান প্রবেশপথটি বন্ধ করে দিয়েছে।
দুই দেশই নিজেদের আকাশে অন্য দেশের উড়োজাহাজ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
পাকিস্তান সরকার বলেছে, ভারত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে বলে ‘নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে তাদের কাছে।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার ও বুধবার তার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে টানা বৈঠক করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী যাতে প্রয়োজনে হামলা চালাতে পারে, সেজন্য তিনি ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন বলেও খবর এসেছে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আরো একটি যুদ্ধ লাগার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২২ এপিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। এ ঘটনায় পাকিস্তান পরোক্ষভাবে জড়িত এমন অভিযোগ তুলে ভারত। এরপর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ ঘটনার পর পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদ চুক্তি বাতিল ও সীমান্ত বন্ধ সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এর জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ এবং সিমলা চুক্তি স্থগিত করে।
এসবের মধ্যে গত বুধবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী হঠাৎ করে জানান, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ভারত তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। এরমধ্যে আবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পেহেলগামের হামলার জবাব দিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ‘অপারেশনাল ফ্রিডম’ দেন। এতে পাকিস্তানে হামলার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। তবে পাকিস্তান সতর্কতা দিয়ে বলেছে, যদি তাদের ভূখণ্ডে কোনো ধরনের হামলা হয়। তাহলে এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
